বিএনপির মধ্যে ‘ডাকাত’ থাকার অভিযোগ, ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ শামসুদ দোহা তালুকদারের

নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও দখলদারিত্বের অভিযোগ নতুন নয় বলে মন্তব্য করেছেন শামসুদ দোহা তালুকদার। শুক্রবার (৯ আগস্ট) নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক দীর্ঘ স্ট্যাটাসে তিনি এসব অভিযোগ উত্থাপন করেন এবং দল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ করেন।
ফেসবুক পোস্টে তালুকদার লেখেন, “বিএনপির নেতাকর্মীদের ব্যাপারে যে সব অভিযোগ করা হয়, তা অমূলক নয়। আজও তো একজন জাতীয়তাবাদী ডাকাত ধরা পড়েছে। চাঁদাবাজি, ডাকাতি, দখলদারিত্ব ছাড়া বর্তমানে তাদের কাজ কি?”
তিনি দাবি করেন, তৃণমূলসহ সর্বত্র বিএনপির নাম ভাঙিয়ে অপকর্ম চলছে। যদিও দলের হাই কমান্ড কিছু ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিয়েছে, কিন্তু সরকার বা পুলিশ দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নিতে পারছে না—এমন অভিযোগও করেন তিনি।
তালুকদারের ভাষ্য, “সন্ত্রাসী যত বড়ই হোক না কেন, পুলিশ দেখলে তার বুক কাঁপে। পুলিশ চাইলে এসব দমন করতে পারে। কিন্তু বর্তমানে তারা ট্রমায় আছে বলে যে অজুহাত দিচ্ছে, তা আর খাটবে না। এখনো যদি ট্রমায় থাকার বাহানা করে তাহলে বলবো এর কারণ অন্য কিছু।”
দলের ভেতরের সমালোচনার সংস্কৃতি নিয়ে ক্ষোভ
পোস্টে বিএনপির ভেতরের সমালোচনার পরিবেশ নিয়েও হতাশা প্রকাশ করেন তালুকদার। তার অভিযোগ, যারা চাঁদাবাজি বা সন্ত্রাস নিয়ে কথা বলেন, তাদেরকে দলের ভেতরে শত্রু হিসেবে দেখা হয়। এমনকি অনেক সিনিয়র নেতা চাঁদাবাজদের পক্ষেও দাঁড়িয়ে যান।
তার ভাষায়, “আমরা প্রয়োজনে চাঁদাবাজির পক্ষে থাকবো, তবুও সমালোচনা সহ্য করবো না—এমন মনোভাব নেতাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে। যারা সমালোচনা করবে, তাদের জিভ ছিঁড়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।”
সাম্প্রতিক ঘটনাকে প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ
স্ট্যাটাসে তালুকদার সাম্প্রতিক একটি ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, “আজ একটা নিউজে দেখলাম, এক নেতা ডাকাতি করতে গিয়ে ধরা খেয়ে গণপিটুনিতে আহত হয়েছে, পরে বিএনপি বহিষ্কার করেছে। এতে কি প্রমাণ হয় না, বিএনপির মধ্যে ডাকাতও আছে?”
তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন, এই ধরনের গোষ্ঠী ভবিষ্যতের নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখল, দিনের বেলায় ব্যালট সিল মারা এবং বিরোধী দলের সমর্থকদের ওপর হামলার মতো কর্মকাণ্ড চালাতে পারে।
পিআর পদ্ধতি নিয়ে সমালোচনা
পোস্টে তালুকদার বিএনপির পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতির বিরোধিতার কারণ নিয়েও ইঙ্গিত দেন। তার মতে, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে বিএনপির ফলাফল পক্ষে আসবে না বলেই যারা পিআর সমর্থন করেন, তারা দলের ‘শত্রু’ হয়ে যাচ্ছেন।
ইসলামী আন্দোলনের নেতার বক্তব্য উদ্ধৃতি
পোস্টে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের বক্তব্যও তুলে ধরেন তালুকদার। তিনি লেখেন, “গতকাল ঝালকাঠিতে ফয়জুল করিম হুজুর বলেছেন, বিএনপি স্বৈরাচারী হাসিনাবান্ধব হয়ে উঠছে। হাসিনারা যা করতো, বিএনপিও এখন তাই করছে। বিন্দুমাত্র সমালোচনা সহ্য করতে পারছে না।”
‘স্বাধীন ভোটের পরিবেশ তৈরি হোক’ দাবি
স্ট্যাটাসের শেষাংশে তালুকদার বলেন, “মানুষ এবারে স্বাধীন মতো ভোট দিবে—এমন পরিবেশ তৈরি হয়েছে কি? সেজন্য আমরা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে সরকারকে তাগাদা দিচ্ছি। যেনতেন নির্বাচনে ক্ষমতায় এসে বিএনপির স্বৈরাচার হয়ে উঠাকে আমরা ঠেকিয়ে দেব ইনশাআল্লাহ।”