হাসিনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে ট্রাইব্যুনালে সাবেক আইজিপ

হাসিনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে ট্রাইব্যুনালে সাবেক আইজিপ

জুলাই মাসের অভ্যুত্থানকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির হয়েছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। রোববার (৩ আগস্ট) সকাল ১০টায় তাঁকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনা হয়, যেখানে বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট ট্রাইব্যুনাল-১ সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু করে।

উল্লেখ্য, মামলার অপর দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও একই ব্যক্তি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, যিনি বর্তমানে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী (রাজসাক্ষী) হিসেবে আদালতে উপস্থিত হয়েছেন।

গত ১০ জুলাই ট্রাইব্যুনাল আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করে এবং মামুনের ‘অ্যাপ্রুভার’ হিসেবে আবেদন মঞ্জুর করে। আজকের দিন ধার্য করা হয়েছে মামলার সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য। এতে মামলার মূল বিষয়বস্তু তুলে ধরা হয়।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জানিয়েছেন, আজ থেকেই শেখ হাসিনাসহ অন্যান্য আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ ও সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন শুরু হয়েছে, যা সরাসরি সম্প্রচারিত হচ্ছে। মামলায় মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে, যেগুলো আদালতে পড়ে শোনানো হয়।

মামলার অভিযোগসমূহ সংক্ষেপে:

১. উসকানিমূলক বক্তব্য ও হত্যাকাণ্ড:
২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্যের জেরে সরকারদলীয় সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সহায়তায় নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণ চালানো হয়। এতে দেড় হাজারের বেশি মানুষ নিহত ও প্রায় ২৫ হাজার আহত হন।

২. প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ:
শেখ হাসিনা সরাসরি হেলিকপ্টার, ড্রোন ও মারাত্মক অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন, যা তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির মাধ্যমে কার্যকর করা হয়।

৩. ছাত্র হত্যা (রংপুর):
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদের গুলিতে নির্মম হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।

৪. চানখাঁরপুলে হত্যাকাণ্ড:
ঢাকার চানখাঁরপুলে ছয়জন নিরীহ আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা করার ঘটনায়ও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।

৫. আগুনে পুড়িয়ে হত্যা (আশুলিয়া):
আশুলিয়ায় ছয়জন নিরস্ত্র সাধারণ নাগরিককে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগও যুক্ত করা হয় মামলায়।

উল্লেখ্য, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এটি চতুর্থ মামলার একটি। এর আগে আদালত অবমাননার মামলায় তাঁকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে তাঁর সরকারের পতন ঘটে। বর্তমানে আরো দুটি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে, যার মধ্যে একটি হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযান সংক্রান্ত।

পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ ও ২৪ আগস্ট।

Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus ( )