জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র পাঠ করলেন প্রধান উপদেষ্টা

জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র পাঠ করলেন প্রধান উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঐতিহাসিক জুলাই বিপ্লবের প্রথম বর্ষপূর্তিতে মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সকালে ঘোষিত হলো বহুল প্রতীক্ষিত ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’। এটি পাঠ করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রস্থলে আয়োজিত আনুষ্ঠানিক এক সমাবেশে ঘোষণাপত্রটি পাঠ করা হয়।

ঘোষণাপত্রে ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান, ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন এবং স্বাধীনতার মূল চেতনার পুনরুদ্ধার নিয়ে জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও রাজনৈতিক অঙ্গীকার প্রতিফলিত হয়েছে। নেতারা বলেন, এই ঘোষণা ১৯৭১ সালের আদর্শ ও ১৯৯০ সালের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ধারাবাহিকতায় একটি নতুন বাংলাদেশের রূপরেখা।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এই ঘোষণাপত্র শুধুই অতীত বিশ্লেষণ নয়, বরং ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলার একটি রূপরেখা। জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে এর বাস্তবায়ন অপরিহার্য।”

ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ‘জনগণের সার্বভৌমত্ব, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা, ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতার মূলমন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতেই এই বিবৃতি।’

জুলাই ঘোষণাপত্রে কী আছে: ধারা ও উপধারা

১। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ২৩ বছরের সংগ্রাম ও ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা।

২। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ার আকাঙ্ক্ষা।

৩। ১৯৭২ সালের সংবিধানের কাঠামোগত দুর্বলতা এবং আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা।

৪। বাকশালের মাধ্যমে একদলীয় শাসন কায়েম ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ।

৫। ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানে সামরিক স্বৈরাচারের পতন ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা।

৬। ১/১১ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে শেখ হাসিনার একচ্ছত্র ক্ষমতার পথ সুগম হওয়া।

৭। সংবিধান পরিবর্তন করে ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা।

৮। গুম, খুন, নির্যাতন ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের অভিযোগ।

৯। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়া।

১০। অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস, দুর্নীতি ও অর্থপাচারের বিস্তার।

১১। বিরোধীদের ওপর দীর্ঘমেয়াদি দমন-পীড়ন ও নিপীড়ন।

১২। বিদেশি প্রভুত্বের বিরুদ্ধে জনগণের আন্দোলনে সরকারের দমননীতি।

১৩। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে ভোটাধিকার হরণ।

১৪। চাকরিতে বৈষম্য, দলীয় নিয়োগ এবং কোটাভিত্তিক বঞ্চনা।

১৫। রাজনৈতিক নিপীড়নের ফলে দীর্ঘমেয়াদি জনরোষ।

১৬। কোটা আন্দোলনে দমন-পীড়ন ও ছাত্র হত্যার ফলে অভ্যুত্থান।

১৭। জনগণের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সংহতি এবং সরকারবিরোধী গণপ্রতিরোধ।

১৮। ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগ।

১৯। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের সার্বভৌমত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা।

২০। সুপ্রিম কোর্টের মতামতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন।

২১। দুর্নীতিমুক্ত ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের অভিপ্রায়।

২২। গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা।

২৩। মানবতাবিরোধী অপরাধের উপযুক্ত বিচার নিশ্চিত করার অঙ্গীকার।

২৪। অভ্যুত্থানের শহীদদের জাতীয় বীর হিসেবে ঘোষণা ও সুরক্ষা।

২৫। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা।

২৬। টেকসই উন্নয়ন ও পরিবেশ-সহিষ্ণু সমাজ গঠনের প্রতিশ্রুতি।

২৭। ২০২৪ সালের ছাত্র অভ্যুত্থানকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা।

২৮। এই ঘোষণাপত্রকে জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে স্বীকৃতি।

সমাবেশে আরও জানানো হয়, এই ঘোষণাপত্র ভবিষ্যতের একটি ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও তরুণ প্রজন্মকে ঐক্যবদ্ধ করে তুলবে।

নোট: এই প্রতিবেদনটি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য ও আয়োজকদের সূত্রে তৈরি।

TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus (0 )