তবে এই চমকপ্রদ ও মুনাফামুখী চেহারার পেছনে আছে এক নিঃশব্দ জগৎ—যেখানে কোটি কোটি ভিডিও কেউই দেখে না। গবেষকরা বলছেন, এই 'অদৃশ্য ইউটিউব' আমাদের বুঝতে সাহায্য করে বাস্তবে মানুষ কীভাবে প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করছে।
১৮ ট্রিলিয়ন ইউআরএল বিশ্লেষণে উঠে এল গোপন চিত্র
ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনিশিয়েটিভের গবেষকরা র্যান্ডম ইউআরএল স্ক্যানের মাধ্যমে ইউটিউবের বাস্তব চিত্র বিশ্লেষণ করেন। প্রায় ১৮ ট্রিলিয়ন ইউআরএল ট্রাই করার পর তারা দেখেছেন:
- গড় ভিডিও ভিউ মাত্র ৪১
- মাত্র ১৩০ ভিউ হলেই ভিডিওটি শীর্ষ ৩৩ শতাংশের মধ্যে
- অসংখ্য ভিডিও কেউই দেখে না, শুধু ব্যক্তিগত সংরক্ষণের জন্য আপলোড করা
এইসব ভিডিওতে দেখা যায় ব্যক্তিগত মুহূর্ত—জন্মদিন, রান্না, পোষা প্রাণীর কথা, বা স্রেফ স্মৃতি ধরে রাখার প্রয়াস।
ইউটিউব: এক ডিজিটাল স্মৃতির ভাণ্ডার
গবেষক ইথান জাকারম্যান বলেন, অনেকেই ইউটিউবকে ইনফ্লুয়েন্সার হওয়ার জায়গা মনে করে না। তারা শুধু একটি নিরাপদ জায়গায় ভিডিও সংরক্ষণ করতে চান। ইউটিউব এক অর্থে ভিডিও ক্লাউড হয়ে উঠেছে।
বন্ধু ও পরিবারের জন্য বানানো ভিডিও
গবেষণায় উঠে এসেছে, ৭০ শতাংশের বেশি ভিডিও ইংরেজি ভাষায় নয়। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া ও লাতিন আমেরিকার অনেক ভিডিও শুধু পরিবার ও বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বানানো, পাবলিক ভিউয়ের জন্য নয়।
এই ধরনের কনটেন্ট ভাইরাল হলে বরং ব্যবহারকারীরা অস্বস্তিতে পড়তেন। কারণ, তাদের উদ্দেশ্য ছিল একান্ত নিজস্ব শেয়ারিং।
ভিউ নয়, স্মৃতি ধরে রাখাই উদ্দেশ্য
একজন ব্যবহারকারী ১৪ বছরে ২৪০০টির বেশি ভিডিও আপলোড করেছেন শুধুমাত্র তার চারটি কুকুরের স্মৃতি সংরক্ষণ করতে। তিনি বলেন, “আমি জানি কেউ দেখে না, কিন্তু আমি আনন্দ পাই এই ভিডিওগুলো রেখে।”
অ্যালগরিদম যা দেখায়, বাস্তবে তা নয়
গবেষকদের মতে, অ্যালগরিদম ভাইরাল করে এমন কনটেন্ট যা নেতিবাচক, বিভ্রান্তিকর বা চরমপন্থী। কিন্তু বাস্তবে বেশিরভাগ কনটেন্ট হয় নিরপেক্ষ অথবা মানবিক অনুভূতির প্রতিফলন।
গবেষক রায়ান ম্যাকগ্রাডি বলেন, “যখন আপনি বুঝবেন মানুষ আসলে কীভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, তখন দেখবেন এটি এখনও মানবিকতার এক খোলা জানালা।”
এই অদৃশ্য গল্পগুলো ভাইরাল না হলেও, এগুলোর মধ্যেই লুকিয়ে আছে ইউটিউবের মানবিক ও বাস্তব রূপ—এক নিঃশব্দ, নির্লোভ কনটেন্টের জগৎ।